শুক্রবার (২ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দেশের ৫৫ কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। দেশব্যাপী ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের পরীক্ষায় বসেছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন পরীক্ষার্থী। প্রতিটি পরীক্ষার হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে করাকরি থাকলেও উল্টো চিত্র ছিল পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে।
পরীক্ষার আগে ও পরে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে পরীক্ষার্থী এবং তাদের স্বজনরা ভিড় করেন হলের গেটে। এতে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর সামনে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। এমন কি প্রতিটি কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায়ও দেখা যায় একই চিত্র।
রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তেজগাঁও সরকারি কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ কেন্দ্রের সামনে নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হন। নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টা পূর্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। তবে পরীক্ষার পুরোটা সময় ধরে এসব কেন্দ্রের বাইরের চিত্র পুরো উল্টো ছিল। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা স্বজনরা যে যার মতো স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জটলা করে দাঁড়িয়ে বা বসে ছিলেন। একই চিত্র দেখা যায় পরীক্ষার পরেও। একই জায়গায় শতশত শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনরা ভিড় করেন। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বাসে উঠেছেন।
রাজধানীর উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষারত অভিভাবক নুরুল আজম বলেন, এখানে নিরাপত্তাকর্মী আছেন মাত্র পাঁচ থেকে ছয় জন। তাদের পক্ষে এত ভিড় সামলানো সম্ভব না। তা ছাড়া, অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব আছে। ঢোকার সময় গেটের সামনে অভিভাবকরা জটলা বেঁধে দাঁড়িয়েছিলেন। বের হওয়ার সময়ও তাই। শিক্ষার্থীদের যে লাইন তার পাশেই ধাক্কাধাক্কি করছেন অভিভাবকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের গেটের বাইরে আরেক অভিভাবক জানান, একজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে একজনের বেশি কেউ আসতে পারবেন না, এরকম একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া দরকার ছিল। দেখা যাচ্ছে, মা-বাবা দুজনই এসেছেন। দুই জনই গেট পর্যন্ত সন্তানকে এগিয়ে দিচ্ছেন। ফলে ভিড় এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে করোনা মহামারি উপেক্ষা করে এভাবে পরীক্ষা নেওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেককেই ফেইসবুকে ভিড়ের ছবি পোস্ট করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করতে দেখা যায়।
এ বছর ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে চার হাজার ৩৫০টি আসনের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন প্রায় সোয়া লাখ পরীক্ষার্থী। আর ঢাকা মহানগরের ১৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৪৭ হাজার পরীক্ষার্থী। দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা চার হাজার ৩৫০টি। আর ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আরও ছয় হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা গত বছর নেওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সংক্রমণ কিছুটা কমলে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি কার্যক্রমের সময়সূচি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত ২২ মার্চ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বন্ধে রিট করেছিলেন উত্তরার বাসিন্দা তৈমুর খান। আকস্মিক করোনোভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত চেয়ে রিটটি করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সেশনে ভর্তির কোনো কার্যক্রম শুরু করেনি। অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরুর অনেক আগেই মেডিকেলে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে তাদের অন্য কোনো বিষয়ে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ সীমিত হয়ে যাবে, এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটি দাখিল করা হয়েছিল।